ভূমিকা – উন্মুক্ত তরবারি – মুফতী মুহাম্মদ জসীমুদ্দীন রাহমানী

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। আমরা কেবলমাত্র তাঁরই প্রসংশা করি এবং তাঁর কাছেই সাহায্য চাই এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা প্রার্থণা করি। এবং তার কাছেই হেদায়েত চাই। আমরা আমাদের নফসের সকল অনিষ্টতা এবং সকল কর্মের ভূল-ভ্রান্তি থেকে তাঁর কাছেই আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হেদায়েত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর তিনি যাকে গোমরাহ হতে দেন কেউ তাকে হেদায়েত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক ও একক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা:) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রাসূল। আমি ঘোষণা করছি যে, সর্বাধিক সত্যকথা, আল্লাহর কালাম (আল্লাহর কথা)। আর সর্বাধিক উত্তম আদর্শ, মুহাম্মাদ (সা:) এর আদর্শ। সর্বাধিক উত্তম কাজ, কুরআন-সুন্নাহে বর্ণিত কাজ। আর সর্বাধিক মন্দ কাজ, কুরআন-সুন্নাহ বিবর্জিত বিদ’আত কাজ এবং সকল বিদ’আত গোমরাহী আর সকল গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে নবুওয়্যাত প্রাপ্তির শুরু থেকেই অনেক বিরোধিতা হয়েছে কিন্তু কেউ তার চরিত্র নিয়ে কোন কটুক্তি করতে পারেনি। মক্কার কুখ্যাত নেতা আবু লাহাব, আবু জাহেলরা যতই বিরোধিতা করুক তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মহান চরিত্রের উপর কোনো প্রকার আপত্তি করেনি। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম নামধারী একদল পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, জ্ঞানপাপী, ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের পাঁ-চাটা গোলাম তথা কথিত ব − গার চক্র মক্কার কুখ্যাত কাফের আবু জাহেল, আবু লাহাবদেরও হার মানিয়ে মুহাম্মাদ (সা.) এর বিরূদ্ধে কাল্পণীক কিচ্ছা- কাহিনী তৈরী করে নানা প্রকার কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট কটুক্তি করে যাচ্ছে। দাউদ হায়দার (রঙ্গিলা রাসূলের লিখক), সালমান রুশদী (দি স্যাটানিক ভার্সেসের লিখক), তাসলিমা নাসরীন, হুমায়ুন আজাদ (পাক সার জমিন সাদ বাদ প্রবন্ধের লিখক), আহাম্মক শরীর (আহম্মদ শরিফ), কবি শামসুর রহমান, কবির চৌধুরী, ড. জাফর ইকবাল গংদের একদল ভাবশিষ্য আহমদ রাজীব ওরফে থাবা বাবা, আসীফ মহিউদ্দিন, অরিফুর রহমান, ইবরাহীম খলীলসহ কিছু ব − গার আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ন বিধান ও আহকামকে নিয়ে এমন কিছু কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে যা কোনো সভ্য মানুষ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না।

উন্মুক্ত তরবারী ৭ এর মাধ্যমে মূলত দেশি-বিদেশি কাফের, নাস্তিক, মুরতাদ প্রভুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পার্থিব স্বার্থ হাসিল করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। কারণ বর্তমান যুগে কেউ যদি কাফের-মুশরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় এবং তাদের আস্থাভাজন হতে চায় তার জন্য সহজ উপায় হলো ইসলামের বিরূদ্ধে অথবা স্বয়ং আল−াহর বিরূদ্ধে অথবা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর বিরূদ্ধে বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান করা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। নতুন প্রজন্মের অন্তর থেকে আল−াহর প্রতি আস্থা ও ঈমান, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ভালোবাসা এবং ইসলামের বিধানের প্রতি আনুগত্যের বিষয়গুলোকে উৎখাত করে তার পরিবর্তে ঘৃণা-বিদ্বেষ তৈরী করাই এদের মূল টার্গেট। এভাবে ইসলামকে এবং ইসলামের সকল বিষয়গুলোকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিমকে নির্মূল করাই এদের উদ্দেশ্য। পাকিস্তানের মালালা কাহিনী, বাংলাদেশের শাহবাগের প্রজন্ম কাহিনী ইয়াহুদি-খ্রিস্টান ও নাস্তিক-মুরতাদদের সেই নীল নকশারই বাস্তব রূপ। বিশেষ করে বাংলাদেশকে তুরস্কের মতো তথা কথিত ধর্ম নিরপেক্ষ (মূলত ইসলাম বিদ্বেষী) একটি রাষ্ট্র বানাতে একদল মানুষ উঠে পরে লেগেছে। এরা কোনোভাবেই ইসলাম, মুসলিম, আল − াহ, মুহাম্মদ ইত্যাদি নাম পর্যন্ত বরদাশত করতে পারে না। সে কারণে ‘নজরুল ইসলাম’ হল থেকে ‘ইসলাম’ কেটে শুধু নজরুল হল, ‘সলিমুল − াহ মুসলিম হল’ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ কেটে দিয়ে শুধু ‘সলিমুল্লাহ হল’, সর্বোপরি সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা’ মুছে ফেলে দিয়ে এখন মুসলিমদের অন্তর থেকেও এগুলো মুছে ফেলার জন্য পাঁয়তারা চলছে। এহেন মূহুর্তে এই সব ইসলামের দুশমনদের মুখোশ উম্মোচন করে দিয়ে তাদের সম্পর্কে মুসলিম জাতিকে সোচ্চার করা এবং তাদের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রতিটি মুসলিমদের উপর ঈমানী দায়িত্ব। সে দায়িত্ব আঞ্জাম দেওয়ার জন্যই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এ বইতে পাঁচটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মহান চরিত্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্তমান যুগের মুসলিম নামধারী নাস্তিক-মুরতাদদের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে এ জাতীয় নাস্তিক-মুরতাদদের ব্যাপারে ইসলামী শরিয়তের ফয়সালা ও বিধান আলোচনা করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে আমাদের করণীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ও পঞ্চম অধ্যায়ে ঈমান ভঙ্গের কারণ ও উসূলে তাকফীর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ (সুব.) আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল নাস্তিক- মুরতাদদের বিরূদ্ধে সীসাঢালা লৌহ প্রাচীরের ন্যায় দৃঢ় সংকল্প নিয়ে মোকাবেলা করার তাওফিক দান করুন। আমীন!

মুফতী মুহাম্মদ জসীমুদ্দীন রাহমানী

তারিখ : ০৫-০৩-২০১৩ ইং

Posted on জানুয়ারি 1, 2016, in উন্মুক্ত তরবারি, ভূমিকা and tagged , , , , . Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

কমেন্ট করুন