খুশিতে প্রফুল্ল শহীদ মুজাহিদিনের স্ত্রী… একটি সত্য ঘটনা

খুশিতে প্রফুল্ল শহীদ মুজাহিদিনের স্ত্রী... একটি সত্য ঘটনা

খুশিতে প্রফুল্ল শহীদ মুজাহিদিনের স্ত্রী… একটি সত্য ঘটনা

সিরিয়াতে হিজরত করা এক মুহাজিরা বোনের ডায়রি থেকে
—————————————————————-

“উম্মে আল বারা, উম্মি উম্মি…” আমার দরজায় ঠক্ঠক্ শব্দ শুনতে পেলাম।
মরিয়ম, বয়স প্রায় ২ বছর। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ছোট্ট মুহাজিরা (হিজরত করা বিদেশি নারী)।

আমার স্বামী আমাকে দরজা খুলে দেখতে বললেন। আমি উম্মে ইউসুফের রুমে গেলাম। দেখলাম কান্নায় তাঁর চোখ ভিজে আসছে, শরীর কাঁপছে।

“কি হয়েছে? বল আমাকে…” জিজ্ঞেস করলাম।
“উম্মে হাবিবা… তাঁর স্বামী গতকালকে শহীদ হয়ে গেছেন।”

আমি অত্যন্ত মর্মাহত হলাম। মনের ভিতরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করতে লাগলাম। উম্মে হাবিবা একজন অল্প বয়সি মিশরীয় মুহাজিরা। তাঁর একটা সুন্দর বাড়ি আছে। সে রান্না করতে পছন্দ করে। দান করতেও অনেক ভালবাসে, যেটাই তাঁর স্বামী তাঁর কাছে নিয়ে আসত সে নির্দ্বিধায় দান করে দিত।

আমি আমার রুমে ফিরে গেলাম। আমার স্বামীকে বিষয়টা বললাম। সে উম্মে হাবিবাকে দেখতে যেতে বলল।

উম্মে ইউসুফ, উম্মে সালাহ এবং আমি গেলাম উম্মে হাবিবার বাসায়। আমরা তাঁর দরজায় ঠোকা দিলে একজন অপরিচিত বোন দরজা খুলে দিল।

ঘরে ঢুকে দেখি অন্তত ২০ জন বোন জড়ো হয়ে গেছেন। কেউ কান্নাকাটি করছে না। সবার মুখে হাঁসি। বাড়ির ভিতর থেকে সুগন্ধ বের হচ্ছে। বাচ্চাদের হাঁসি-খুশি এবং ফ্লোরের উপর খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। আমি হতভম্ব ও বিস্মিত হলাম।

“কি হচ্ছে এখানে?” নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম।

“এস শামস , ওহ না, এস উম্মে আল-বারা, এস নতুন বৌ! তুমি এখানে কেন এসেছ? তোমার তো এখন তোমার স্বামীর সাথে থাকা উচিৎ!”

উম্মে হাবিবা আনন্দের সাথে আমাকে স্বাগত জানাচ্ছে। বরাবরের মতই তাঁকে অনেক সুন্দর লাগছিল, খুব সুন্দর একটা জামা পরেছিল, মুখে ছিল মেকআপ এবং পরনে জুয়েলারি।

“উম্মে হাবিবা…” আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার দুই গাল বেঁয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। একটা বাচ্চার মত কান্নাকাটি করতে লাগলাম। সে আমার তাঁর হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিল এবং আমার গাল দুটি ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে এমন কিছু কথা বলল যা আমাকে খুবই বিস্মিত করেছিল।

“উম্মে আল বারা, আমার প্রিয় বোন, আমার স্বামী একজন শহীদ। ইনশাআল্লাহ্‌, সে এখন জান্নাতে, হয়ত হুর-আল-আইনকে বিয়ে করেছে। আজকের দিনতো হল আনন্দের দিন। উৎসবের দিন। কেউ কাঁদবে না। বিশেষকরে তুমি, কেননা তুমি হলে নতুন বউ। তোমার সবসময়ই হাঁসি মুখে থাকা উচিৎ।”

তাঁর কথাগুলো আমার কান্না আরো বাড়িয়ে দিল। আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে কেউ এত শক্ত হতে পারে। আমি তাঁর সন্তানদের দিকে তাকালাম, খুব সুন্দর দুটা বাচ্চা মেয়ে। আমি জানিনা তাঁরা বুঝতে পেরেছে কিনা যে তাঁদের বাবা আর দুনিয়াতে নেই।

আমি হাবিবাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তাঁর কেমন লাগছে। সে বলল সে খুশি, কারন তাঁর মা তাঁকে বলেছেন যে তাঁদের বাবা জান্নাতে তাঁদের জন্য একটা বাড়ি কিনেছেন এবং তাঁদের জন্য অপেক্ষা করতেছেন।

আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। আমি উম্মে হাবিবার কপালে একটা চুমু খেয়ে একাই বাড়ি ফিরে আসলাম। আমি হাটছিলাম আর কাদতেছিলাম। আমার চোখের পানিতে আমার নেকাব ভিজে যাচ্ছিল। তাঁর প্রত্যেকটা শব্দ আমার মাথায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল, ইউপোরেট নদির ঠাণ্ডা বাতাস অনুভব করতে পারছিলাম, যা ছিল মাত্র কয়েক কদম দূরে।

আমি বাড়ি ফিরে এলাম। আমার স্বামী চুপ করে বসেছিল, যে বুঝতে পেরেছিল যে আমার স্বাভাবিক হতে আরো কিছু সময় লাগবে। আমি তাঁর চেহারার দিকে তাকালাম, তাঁর সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র ৪ দিন হল এবং এরপরও আমি তাঁর জন্য প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করতে লাগলাম, আমি উম্মে হাবিবার কথা চিন্তাই করতে পারছিলাম না, যারা ৭ বছর সংসার করেছে এবং তাঁদের দুটো বাচ্চাও আছে।

অদ্ভুত! শামের বিষয়গুলো আসলেই অনেক অদ্ভুত। আমি জানিনা কিভাবে এই লোকগুলো তাঁদের এত বড় কষ্টগুলোকে এত সহজে মানিয়ে নিচ্ছে।

আমি আমার স্বামীর হাত ধরে বললাম-
“আমি এত শক্ত নই। দয়া করে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করো তিনি যেন আমাকে প্রতিকূলতা মোকাবেলায় আরো সাহসী করে তুলেন।”

সে আমার আঙ্গুলগুলো ধরে বলল-
“আসলেই তুমি শক্ত নও, তবে তুমি ‘সুপারওমেন’, কেন জান? কারন আমি ‘সুপারমেন’ এবং তুমি আমার স্ত্রী। তুমি আমার সব মুনাফা শেয়ার করবে।”

কৌতুকটা মজার হলেও আমি হাঁসতে পারিনি। আমি শুধু তাঁর হাত দুটি আমার গালের উপর রেখে বললাম-
“আবু আল-বারা, শুধু আমাকে ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি চলে যেও না। প্লিজ।”
_________________________________________________________

“Diary Of A Muhajirah” থেকে সংগৃহীত এবং অনুবাদকৃত।
লেখকঃ উম্মে শামস ওরফে উম্মে আল-বারা, সিরিয়াতে হিজরত করা মুহাজিরা।
পেশাঃ ডাক্তার

Posted on অগাষ্ট 31, 2015, in মুহাজির. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

কমেন্ট করুন